সাজিদুর রহমান সাজিদ: ২০০০ সালে আমি জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর-এর উস্তাদ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হই। পূর্বে টানা প্রায় আট বছর দারুল উলুম ঢাকাদক্ষিণ মাদরাসায় শিক্ষকতা করেছি। জামিয়া মাদানিয়ায় শিক্ষক হিসাবেই আমার নতুন আসা নয়। এর পূর্বেও বার কয়েক এসেছি এদারার চূড়ান্ত পরীক্ষার নাগরান হিসাবে। পরীক্ষা উপলক্ষে প্রতিবারই জামিয়ায় নয়-দশদিন থাকা পড়ত। এখানকার সকল উস্তাদের সাথেই মোটামুটি একটা পরিচিতি ছিল। তারা আমাকে চিনতেন। আমিও চিনতাম। কিন্তু জামিয়া মাদানিয়ার মুহতামিম মরহুম শায়খ মাওলানা আবদুল হাই রাহ. এর সাথে আমার পরিচিতি ঘটে সেই ২০০০ সালে উস্তাদ হয়ে জামিয়ায় আসার পর।
তিনি কথা-বার্তা খুব একটা বলতেন না। অতি সাদামাটা ও সাধারণ ছিল তাঁর চলাফেরা। তবে সবাই তাঁকে শ্রদ্ধা করত; বুযুর্গ হিসেবে সমীহ করত—এটা বুঝতাম। তবে কী তাঁর বুযুর্গি ছিল? কী তাঁর ইলমি-আমলি কামাল ছিল—তা সহজে সাদা চোখে নজরে আসত না। আমিও প্রথম প্রথম তাঁকে বৈশিষ্ট্যহীন একজন আলেম ও মুহতামিম মনে করতাম। কিন্তু সাধারণ-অসাধারণ সকলের ভক্তি-শ্রদ্ধা ও সমীহ দেখে তাঁকে মুতালা’ করতে সচেষ্ট হলাম। গভীর না হলেও আজো সেই মুতালা’ আছে অব্যাহত। যতই তাঁকে দেখি, তাঁর আবশ্যিক এবাদত, সামাজিক ও প্রতিষ্ঠানিক আচার-ব্যবহার যতই প্রত্যক্ষ করি ততই তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধা হতে থাকে গভীর থেকে গভীরতর। শ্রদ্ধাপূর্ণ ভীতির আস্তরণ জমাট বেঁধে হয়ে ওঠতে থাকে দেয়ালসদৃশ। তাঁর হায়বত ক্রমে বিস্তৃত হয় অন্যান্য সবার মতো আমারও সত্তা জুড়ে। সত্যিই যাঁরা আল্ল¬াহকে ভয় করে সব সৃষ্টি তাঁদেরও ভয় করে। তবে সে ভয় হল শ্রদ্ধাপূর্ণ, ভালবাসাসিক্ত ও হীতাকাক্সক্ষীসুলভ।
বর্তমান এ কলির কালে বুযুর্গিরও আছে নানারকম জৌলুস। নানা কৌশলে আছে তার প্রচারচেষ্টাও। কারণ জানলে কোনোদিন হয়ত মানবে এবং শুনবে। কিন্তু না জানলে তো মানা এবং শোনার আশা করা যায় না। সে যুক্তি থেকে অধুনা বুযুর্গিতে এসেছে জৌলুস, লৌকিকতা ও বহুমাত্রিক প্রচারপরিকল্পনা। কিন্তু বুযুর্গী অর্জন সাপেক্ষ হলেও আল্লাহপ্রদত্ত এক মহামূল্যবান সম্পদ। আর মহামূল্যবান সম্পদকে লোকচক্ষুর অন্তরালে গোপনে রাখাই সঙ্গত। বুদ্ধিমান মালিক তার মূল্যবান সম্পদকে যে গোপনেই রাখে—একথা কে না জানে। হ্যাঁ, গোপনে রাখার প্রাণান্তকর চেষ্টার পরও যদি কিয়দাংশ প্রকাশ হয়ে পড়ে, তাহলে সেখানে তাকে অসহায় বলা ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই। কিন্তু যেখানে জৌলুস, প্রচার ও অত্মপ্রকাশের সাধনা থাকবে—সেখানকার বুযুর্গী আল্ল¬াহর নিকট অগ্রাহ্য ও ব্যর্থ হওয়ার সমূহ সম্ভবনা।
শায়খ আবদুল হাই রাহ. সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার বুযুর্গ, ওলি ও সত্বিক পুরুষ ছিলেন। তিনি ছিলেন অন্তর্মুখী। আত্মসমাহিত, প্রচারবিমুখ, লোভ বলতে তাঁর মোটেও ছিল না। তিনি প্রাত্যহিক এবাদত করতেন অন্যান্য সবার মতো। এতে কোনো বিশিষ্ট্যতা ও চোখে পড়বার মতো কোনো ভিন্নতা ছিল না। রিয়া বা লৌকিকতাকে তিনি সীমাহীন নাপছন্দ করতেন। সতর্কতার সঙ্গে রিয়া পরিহার করে চলা ছিল তাঁর অভ্যাস। তাহাজ্জুদ নামাযসহ অন্যান্য নফল বন্দেগি যে তিনি করতেন না—তা নয়। সাধ্যমত সবই করতেন। করতেন খুবই সঙ্গোপনে, নীরবে ও একান্তে। নফল রোযা রাখতেন। শেষ রাতে উঠতেন। নামায পড়তেন। যিকির-আযকার ও রোনাজারি করতেন। কিন্তু সহজে কারও টের পাওয়ার কোনো উপায় ছিল না। এমনকি যে খাদিম তাঁর কামরায় পর্দার অপর প্রান্তে থাকে, তারও যাতে চোখে না পড়ে—এরূপ সতর্কতা অবলম্বন করতেন। কুরআন কারীমের সাথে ছিল তাঁর অসম্ভব ভালবাসা। তন্ময় হয়ে বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করতেন। তবে তাঁর সে তিলাওয়াত হত অনুচ্চ মধুর সুরে। কেউ হয়ত বার বার তাঁকে কুরআন তিলাওয়াতের এ নফল বন্দেগিতে প্রত্যক্ষ করেছে। কারণ তিলাওয়াতকে ইচ্ছা থাকলেও খুব একটা লুকানো যায় না। এ ছাড়া তাঁর অন্যান্য এবাদত ছিল খুবই গোপনীয়, প্রচ্ছন্ন। তিনি ছিলেন মাটির নিচ দিয়ে নিত্য প্রবাহমান ফল্গুধারার মতো। ফল্গুধারা সতত প্রবাহিত হয়। কিন্তু খুব কম মানুষই তা টের পায়। সম্মিলিতভাবে করা তাঁর দুয়া হত খুবই মর্মস্পর্শী, হৃদয়বিদারক। ভীতবিহবল চিত্তে ভাঙাচুরা হৃদয়ে স্বল্পদীর্ঘ তাঁর সহজ সরল দুয়া যে কী পরিমাণ চিত্তাকর্ষক ছিল—তা যারা প্রত্যক্ষ করেছে তারা অনুধাবন করেছে। তা বলে বুঝানো অসাধ্য না হলেও কষ্টসাধ্য। কুরআন-হাদিসে বর্ণিত দুয়া ব্যতীত যেসব দুয়া তিনি নিজ থেকে করতেন- দুয়ার এ কথাগুলো কোনো তাকাল্লুফ ছাড়াই আসত তাঁর মন থেকে। তাই কথাগুলো সহজ সরল হলেও সবার মনে তোলপাড় সৃষ্টি করত। হৃদয় বিগলিত করত। পাষাণের চোখকেও অশ্র“সিক্ত করত। মাহফিল জুড়ে বিরাজ করত এখলাসপূর্ণ ভাবগম্ভীর পরিবেশ। এমনি ধরনের দুয়া যে আল্লাহর কাছে মকবুল না হয়ে বিফলে যাবে না—প্রার্থনারত অবস্থায়ই সবার মনে এর একটা প্রতীতি জন্ম নিত। দুয়ায় বাড়াবাড়ি ও দুয়ায় বাহুল্য কথাবার্তা বলে নিষিদ্ধ কিছু জিনিস আছে। তাঁর দুয়া ছিল এসব আবিলতামুক্ত, পরিচ্ছন্ন। পার্থিব জীবনে তাঁর অধিকাংশ দুয়া মকবুল হওয়ার রহস্য সম্ভবত এতেই নিহিত ছিল। এজন্যে মানুষ তাঁকে দিয়ে দুয়া করাতে থাকত খুবই লালায়িত।
মোটকথা তাঁর ইলম-আমল, চলা-ফেরা, লেবাস-পোশাক, দুয়া-বন্দেগী কোনো কিছুতেই লৌকিকতা ও আত্মপ্রকাশের ন্যূনতম কোনো স্পর্শ বা ছোঁয়া ছিল না। তিনি ছিলেন আখেরাত সম্পর্কে সচেতন ও প্রচারবিমুখ প্রভিভাবান কীর্তিমান বিরল ব্যক্তিত্ব। নিজেকে ঢেকে রাখবার একটা মানসিকতা সর্বদা কাজ করত তাঁর মধ্যে। এজন্য অপরিচিত কেউ তাঁকে বুঝতে না পারলেও, যারা পরিচিত—যারা তাঁর সাথে যে কোনোভাবে সম্পর্ক রাখে তাদের কাছে তাঁর তাকওয়া-পরহেজগারি, কৃতিত্ব ও প্রতিভা ক্রমে হয়ে ওঠতো ভাস্বর, প্রোজ্জ্বল। তাই সে যে পর্যায়ের মানুষই হোক, তাঁকে শ্রদ্ধা ও খাতির না করে পারত না। বিরোধীভাবাপন্ন হলেও তাঁর সামনে গেলে আত্মীয়সুলভ আচরণ ছাড়া কোনো বিরূপ কথা তার মুখে ফুটে ওঠতো না। ফুলে সুগন্ধি থাকলে কোনো ব্যবস্থা অবলম্বন ব্যতিরেকেই যে সুবাস ছড়ায়—এ সত্যটি তার আটপৌড়ে সাধামাটা জীবনে বরাবরই পরিলক্ষিত হয়েছে।
জামিয়া মাদানিয়া ছিল তাঁর ওড়না-বিছানা, ক্ষেত-গেরস্থি। এবাদতের নিয়তে পুণ্যের আশায় যে তিনি জামিয়ার খেদমতে নিবেদিতপ্রাণ থাকতেন—একথা যে কারো বুঝতে কোনো সময় লাগত না। তাঁর ও জামিয়ার সব অভাব অনটন এবং সার্বিক সমস্যার সমাধান মহান আল্লাহর দরবার থেকে নেওয়ার চেষ্টা করতেন। জামিয়া কোনো কোনো সময় অভাবে পড়ত। বোর্ডিংয়ে খানা-খোরাকির সঙ্কট দেখা দিত। জামিয়া লক্ষ লক্ষ টাকা ঋণগ্রস্ত হত। দোকান থেকে তাগাদা আসত। উস্তাদবৃন্দের তিন-চার মাসের বেতন আটকা পড়ত। এ অভাব মোচনে তিনি চেষ্টা করতেন। মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতেন। জামিয়ার প্রয়োজন মানুষের সামনে পেশ করতেন। জামিয়ার সুখ-দুঃখের কথা শোনাতেন। কিন্তু ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখের কথা- চাই সেটা শারীরিক হোক বা প্রাতিষ্ঠানিক ও পারিবারিক ভাষা দিয়ে শুনানো তো দূরের কথা, ভাব-ভঙ্গিতেও প্রকাশ করতেন না। ইস্তেগনাইয়্যাত তথা অমুখাপেক্ষিতার এ যাহিদানা গুণ পূর্ণমাত্রায় তাঁর মধ্যে বিদ্যমান ছিল। এ নির্মোহ-নির্লোভ ও স্বার্থহীন মানসিকতাই তাঁকে জনমানুষের হৃদয়ে স্থান করে দিয়েছে। মানুষের সাথে তাঁর সম্পর্ক যে একমাত্র জামিয়ার খাতিরে নিছক আল্লাহর জন্যে—একথা সবাই বুঝত। আর বুঝত বলেই জামিয়ার সঙ্কটকালে তাঁর ডাকে সাড়া দিতে মানুষ দেরি করত না।
জামিয়ার আর্থিক সংকট দূরীকরণার্তে তিনি আল্ল¬াহর ভয় ও আশায় দুদুল্যমান অবস্থায় রাতদিন হাড়ভাঙ্গা মেহনত করতেন। আল্লাহর দিকে আরো বেশি রুজু ও ইনাবত করতেন। ছাত্র-উস্তাদ একত্রিত হওয়ার সুযোগ হলে নসিহত করতে গিয়ে প্রায়ই বলতেন, জামিয়ার এ অর্থ সঙ্কট হল আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা। আমরা এ পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছি আমাদেরই দুর্বলতা ও ক্রটির কারণে। হয়ত আমরা নামাযে গাফলতি করছি, পড়া-পড়ানোতে ত্র“টি করছি কিংবা আল্লাহপ্রদত্ত নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়ে কার্পণ্য করছি। এ জন্য আমাদের এত কষ্ট করতে হচ্ছে। আমরা আল্লাহর নিকট তাওবা করি, আমল সংশোধন করি ও নিজ নিজ দায়িত্ব আদায়ে সচেতন হই। ইনশাআল্লাহ অচিরেই সঙ্কট দূরীভূত হবে। স্বাচ্ছন্দ ও প্রাচুর্য আসবে। সত্যি বলতে কি, তাঁর এ নসিহত শুনে আমরা যখন আত্মজিজ্ঞাসায় মনোযোগী হতাম, আমল সংশোধনে সচেষ্ট হতাম। মাস খানেকের মধ্যেই জামিয়ার অভাব দূর হয়ে যেত। পড়ালেখা শিকেয় তোলে ব্যাপকভাবে চাঁদা কালেকশনে ব্যাপৃত হতে তিনি কখনো বলতেন না। আল্ল¬াহর দিকে মনোনিবেশ করতে বলতেন। আমল সংশোধনের তাগাদা দিতেন। এভাবে সকল সমস্যার সমাধান তিনি আসমান থেকে আনতে গুরুত্বের সঙ্গে চেষ্টা করতেন।
তিনি একজন যাহিদ ও ত্যাগী বুযুর্গ ছিলেন। দুনিয়াদার ছিলেন না। দুনিয়ার বিত্ত-সম্পদের প্রতি না তাঁর এতটুকু লোভ ছিল, না এর গরজ বোধ করতেন। তিনি চাইলেই তো পারতেন। একাধিকবার ইংল্যান্ড সফর করেছেন। জামিয়া এরিয়ার লোকজনের হৃদয়ে তাঁর প্রতি যে শ্রদ্ধা ও আস্থা আছে, তাদের মধ্যে তাঁর যে বিশাল গ্রহণযোগ্যতা আছে, এর একটু সুযোগ নিলেই তো পারতেন। এর নির্দোষ সুযোগ গ্রহণ করবার মওকা যে তাঁর আসেনি- এমন তো নয়। কিন্তু তিনি সে পথে যাননি। অত্যন্ত সচেতনতার সাথেই সে পথ পরিহার করেছেন। নতুবা দুনিয়া তাঁর পদপ্রান্তে লুটিয়ে পড়ত। ভাঙা টিনের চালাঘরে থেকে বৃষ্টির পানি খেতে হত না। এখন তাঁর বাড়িতে দালান উঠেছে। এটা তাঁর কামানো দুনিয়া নয়। বাড়ি-ঘরের জীর্ণদশা দেখে তাঁর প্রবাসী শিষ্য শাগরেদরা টাকা নিয়ে এসেছে। তাঁর ঘর নির্মাণ করতে চেয়েছে। তিনি বলেছেন, না, টাকাগুলো জামিয়ার তহবিলে দিয়ে দাও। জামিয়া আর্থিক সঙ্কটে আছে। নতুবা অভাবী লোকজনদের মধ্যে বিতরণ করে দাও। আমার লাগবে না। দুয়া করো, আমি ভালো আছি। কিন্তু না; তাঁর ভক্ত শিষ্যরা মানেনি। তারা বুঝিয়েছে, সুপারিশ ধরেছে। কোনো রকম নিমরাজী করে একপ্রকার জোর করেই ঘর বেঁধে দিয়েছে। এটা তাঁর ভক্ত অনুরক্তদের একান্ত ভালবাসার নিদর্শন।
বিদেশে তাঁকে অনেক হাদিয়া দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি তা ভোগ করেননি। জামিয়ার তহবিলে জমা দিয়েছেন। জামিয়ার সুবাদে জামিয়ার জন্যই এই বিদেশ সফরে আসা। তাই যা আসবে সবই জামিয়ার। চাই তা যে নামেই আসুক। সুবহানাল্ল¬াহ! এমন মানুষও তাহলে জগতে ছিল। আর ছিল বলেই সূর্য আজো আলো দেয়, চন্দ্র আজো øিগ্ধতা ছড়ায়…।
রোগ-শোক-যন্ত্রণা দীর্ঘস্থায়ী হলে মানুষ বেশিদিন ধৈর্যধারণ করতে পারে না। একবার সে কাতর হয়। হা হুতাশ করে। হতাশাগ্রস্ত হয়। দুশ্চিন্তায় জর্জরিত হয়। কিন্তু তিনি প্রায় পাঁচ বছর শয্যাশায়ী অবস্থায় ছিলেন। নিজ শক্তিতে শোয়া থেকে উঠে বসতেই পারতেন না। হাটা-চলা বা অন্য কিছু করা তো দূরের কথা। এত দীর্ঘ অসুস্থতাজনিত কষ্টের পরও তাঁর ধৈর্যে এতটুকু চিড়ও ধরেনি। শায়িতাবস্থায় সময়মত নামায পড়েছেন। পারা পারা কুরআন শুয়ে শুয়ে তিলাওয়াত করেছেন। আমরা কতবার দেখতে গিয়েছি। কোনোদিন তাঁর কাছ থেকে ধৈর্যচ্যুতির কোনো আভাস পাইনি। রোগযন্ত্রণার কোনো শেকায়েত শুনিনি। তিনি একদিন শুধু বলেছিলেন—“মাত্র এক পারা কুরআনের জিলদও আমি মেলে ধরে রাখতে পারছি না। দুর্বল হাত থেকে বুকের ওপর পড়ে যায়। তাই ক’দিন ধরে দেখে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারছি না।” হায়, তাঁর কণ্ঠ থেকে সে দিন যে কী আফসোস ঝরে পড়েছিল, তা স্মরণ হলে আজো আমার ভেতরটা কেমন মোচড় দিয়ে ওঠে। শুধু রোগ যন্ত্রণাই নয়। মন চায় না এমন সব ব্যাপারেই তাঁর ছিল সীমাহীন ধৈর্য। মুসিবতে ধৈর্য, এবাদতে ধৈর্য, গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে ধৈর্য—এক কথায় ধৈর্যের সকল প্রকারই তাঁর মধ্যে বিদ্যমান ছিল। তিনি আপাদমস্তকই ছিলেন ধৈর্যের অটল পাহাড়।
সাধারণের মধ্যে বিচরণকারী এ অসাধারণ মানুষটি আজ আমাদের মাঝে নেই। এ আত্মাসমাহিত স্বল্পবাক প্রচারবিমুখ মানুষটির মধ্যে অনুসরণীয় যেসব গুণাবলি নিহিত রয়েছে, তার সন্ধান লাগানো একা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। তার কীর্তিময় বর্ণাঢ্য জীবন নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হওয়া প্রয়োজন মনে করি। জাযাল্ল¬াহু আন্না আবদাকা মা হুয়া আহলুহু।
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া মাদিানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর
সম্পাদক, জামিয়া মুখপত্র আল-হিলাল।