ইসমাঈল আহমদ: ছোট বেলা থেকে আমি হুজুর রাহ. কে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। কারণ তিনি ছাত্রজীবন থেকে তাঁর মৃত্যুপূর্ব পর্যন্ত আমাদের জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব ছিলেন। ইমাম সাহেব হুজুর নামে ছিল তাঁর পরিচিতি। তদানীন্তন মসজিদের মুতাওয়াল্লি ছিলেন আমার দাদা মরহুম মাওলানা বশীর উদ্দিন রাহ.। তার তিরোধানের পর মুতাওয়াল্লী ছিলেন আমার পিতা। সে জন্য ইমাম সাহেবের সাথে আমাদের বাড়ির সম্পর্কটা ছিল একটু বেশি। এ ছাড়া আত্মীয়তার সম্পর্কহেতু বিভিন্ন কারণে প্রায় দিন সকাল বেলা হুজুর আমাদের বাড়িতে আসতেন। বিধায় কাছ থেকে তাঁকে বারবার দেখার সুযোগ হয়েছে আমার। ইমাম থাকাকালীন বাৎসরিক টিফিনের পালা যখন আমাদের বাড়িতে আসতো; তখন অধিকাংশ সময় আমাকেই টিফিন নিয়ে যেতে হত। আমি প্রায়ই হুজুরের খানা পরিবেশন করতাম। সে সুবাদে তাঁর সাথে অনেক আলাপচারিতারও সুযোগ হয়েছে। বাস্তব সত্য যে, হুজুর কোনো দিন কারো খানার নিন্দা করেননি; বরং যখনই যা জুটেছে আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের সাথে তা খেয়েছেন। তাঁর প্রতিটি কাজ ছিল সুন্নতে নববির আলোকে। তিনি কখনো ওযুবিহীন অবস্থায় বা আসন পেতে দুয়া করেননি; বরং নামাযের সুরতে বসে অত্যন্ত বিনীতভাবে ভাবগম্ভীর হৃদয়ে দুয়া করতেন। যে সময়গুলোতে দুয়া কবুল হয় বলে হাদিসে উল্লেখ আছে, ওই সময়গুলোতে মনোযোগের সাথে দুয়া করতেন। তাহাজ্জুদের নামাযের পর জিকির-আযকার ও তাসবিহ পাঠ করে দীর্ঘ মোনাজাত করা ছিল তাঁর নিত্যদিনের আমল। রামাযান মাসের তাঁর দীর্ঘ মোনাজাতে আমি নগণ্যও শরিক হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। তিনি ইস্তিগফার, দরূদ শরিফ ও আল্লাহর প্রশংসার মাধ্যমে প্রার্থনা আরম্ভ করতেন। প্রথমে কুরআনের বর্ণিত দুয়াসমূহ, এরপর হাদিসের বর্ণিত প্রসিদ্ধ দুয়া, এরপর বুযুুর্গানের প্রসিদ্ধ দুয়াসমূহ পাঠ করার পর নিজ ভাষায় দুয়া করা আরম্ভ করতেন। এতে নিজের দীনতা, হীনতা, অক্ষমতা প্রকাশ করে, কাকুতি-মিনতি করে, অশ্র“ ফেলে আল্লাহর দরবারে এমনভাবে আহাজারি করতেন যে, তিনি যেন মাবুদে হাকিকিকে তাঁর চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন। তাঁর দরবার থেকে সরতে বা হাত নামাতে মোটেও চাচ্ছেন না। সাহরির সময় যে চলে যাচ্ছে সেদিকেও যেন কোনো খেয়াল নেই তাঁর। যে কয়টি বিষয় প্রায়ই তাঁর দুয়ার প্রতিপাদ্য হত। তন্মধ্যে কয়েকটি নিুে উল্লেখ করছি:
ক. “হে মাওলা! আমি দীর্ঘ জীবন পেয়েছি, তাই অপরাধ বেশি করেছি। তোমার নিয়ামত বেশি ভোগ করেছি; কিন্তু তোমার ইবাদত করতে পারি নাই। সারাটি জীবনেও রুকুর মতো রুকু করতে পারি নাই, সিজদার মতো সিজদাও করতে পারি নাই, আমার জীবনকে আমি হেলায় নষ্ট করে ফেলেছি, আমাকে ক্ষমা করো।”
খ. “হে আল্লাহ! সমস্ত দ্বীনি মাদারিসকে কবুল করো। বিশেষ করে আমার এ জামিয়া মাদানিয়াকে কবুল করো। ১৯৯৫ সনের ১৭ই মে যখন ‘আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর মহিলা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করলেন, তখন থেকে তিনি সর্বদা দুয়া করতেন, হে আল্লাহ এ গ্রামের দু’টি মাদরাসা, একটি পুরুষ-মাদরাসা অপরটি মহিলা-মাদরাসা, উভয়টিকে কবুল করে নাও।
গ. “হে আল্লাহ! দুনিয়ার মজলুম ও নির্যাতিত মুসলমানদের সাহায্য করো। ইসলামের শত্র“দেরকে হিদায়ত দাও। দুনিয়ার মধ্যে শান্তির হাওয়াকে চালু করো।”
এ ছাড়াও এলাকার মধ্যে ঐক্য, শান্তি, শৃঙ্খলা, উন্নতি, অগ্রগতি ও পরস্পরের মধ্যে মিল-মহব্বতের জন্য দুয়া করতেন। কারো কারো নাম ধরে হেদায়তের দুয়া করতেন। এলাকার লোকজনও হুজুরের দুয়ার খুব প্রত্যাশী ছিলেন। হুজুর ছাড়া অন্য কারোর দুয়াতে তাদের পিপাসা মিটতনা। একদা আমাদের গ্রামের এক বাড়িতে বুখারি শরিফের খতমের পর এক যোগ্য বুযুর্গ ও শায়খুল হাদিস সাহেব দুয়া পরিচালনা করলেন; কিন্তু তাতে বাড়ির লোকদের তৃপ্তি আসেনি, তারা পুনরায় ইমাম সাহেব হুজুরকে দুয়া করার জন্য আবদার জানালেন। এর দ্বারা সহজেই অনুমান করা যায় যে, লোকেরা কি পর্যন্ত হুজুরের দুয়ায় মুগ্ধ হতেন। তারা জানতেন যে, হুজুর কারো জন্য অন্তর খুলে দুয়া করলে অবশ্যই তা কবুল হবে। বাস্তবেও হুজুর ছিলেন মুসতাজাবুদদাওয়াত। অনেকেই হুজুরের দুয়ার ফলাফল নগদ লাভও করেছেন। হুজুরের আহাজারিপূর্ণ, আকর্ষণীয় ও মুগ্ধকর দুয়া দু’চার দিন যারা শুনেছেন তাদের অন্য কারো দুয়াতে এরকম তৃপ্তি সহজে আসার কথা নয়। হুজুর সাহেবে কাশফ (অন্তঃদৃষ্টিসম্পন্ন) ছিলেন বলে কেউ কেউ ধারণা করেন। তিনি রাহ. যে আল্লাহর খাস ওলি ছিলেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ছোট একটি ঘটনা থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। আমাদের গ্রামের সরল, প্রবাসী এক মুরব্বি হুজুরের সাথে গ্রামের কোনো এক বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি করেন। এর কয়েকদিন পর তিনি বিলাত চলে যান। বছর দু’এক পর তিনি পুনরায় স্বদেশে ফিরে এসে হুজুরকে বলেন, হুজুর! আমি আপনার সাথে অবান্তর তর্ক করে আপনার অন্তরে আঘাত দিয়েছি, দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি স্বপ্নে আপনার ব্যাপারে অবগত হয়েছি। আপনি একজন আল্লাহর ওলি।
হুজুর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দুয়া করতেন, সবটুকু লিখলে প্রবন্ধটি “দুয়াপঞ্জী” ’র আকার ধারণ করবে। তবে বিশেষ সময়ে, বিশেষ করে ১২ তাসবিহ আদায়ের পর যেসব দুয়া বেশির ভাগ করতেন।
তন্মধ্যে নিুে কয়েকটি উল্লেখ করছি
الْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِي هَدَانَا لِهَذَا وَمَا كُنَّا لِنَهْتَدِيَ لَوْلا أَنْ هَدَانَا اللّهُ لَقَدْ جَاءتْ رُسُلُ رَبِّنَا بِالْحَقِّ.
১. “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই; যিনি আমাদেরকে (এ পর্যন্ত) পথপ্রদর্শন করেছেন, আর যদি আল্লাহ আমাদেরকে পথপ্রদর্শন না করতেন তাহলে আমরা কখনো পথ পেতাম না। আমাদের প্রতিপালকের রাসূলগণ আমাদের কাছে সত্যবাণী নিয়ে এসেছেন।”
الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، والصلاة والسلام على أشرف الأنبياء والمرسلين، وعلى آله وأصحابه أجمعين.
২. “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর; জন্য যিনি সমস্ত জগতের প্রতিপালক, আর রহমত এবং শান্তি বর্ষিত হোক নবী ও রাসূলদের মধ্যে থেকে যিনি সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ তাঁর উপর, তাঁর পরিবার-পরিজনের ওপর এবং তাঁর সমস্ত সঙ্গী-সাথীদের ওপর।”
الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ، مَلِكِ يَوْمِ الدِّينِ، إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ، اهدِنَا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ، صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِم من النبيين والصديقين و الشهداء والصالحين، وحسن أولئك رفيقا
৩. “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য; যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক, যিনি অত্যন্ত দয়াময় পরম দয়ালু, বিচার দিনের মালিক, আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি। আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করো। সে সমস্ত লোকদের পথ যাঁদেরকে তুমি অনুগ্রহ দান করেছ অর্থ্যাৎ নবী, সিদ্দীক (সত্যনিষ্ঠ), শহীদ ও সৎকর্মশীলগণের পথ, তাঁরা কতইনা উত্তম সঙ্গী।”
رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
৪. “ওগো আমাদের প্রভু, আমরা নিজেদের ওপর (অনেক অনেক) অন্যায় করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা এবং দয়া না করেন, তবে আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের অন্ত-র্ভুক্ত হয়ে যাব।”
اللهم حَبّب إِلَيْنَا الْإِيمَانَ وَزَيَّنَهُ فِي قُلُوبنا وَكَرِّهَ إِلَيْنَا الْكُفْرَ وَالْفُسُوقَ وَالْعِصْيَانَ وجَعَلنَا منَ الرَّاشِدين
৫. “হে আল্লাহ, আমাদের নিকট ঈমানকে প্রিয় করে দাও (অর্থাৎ আমাদের অন্তরে ঈমানের মহব্বত সৃষ্টি করে দাও) এবং তা হৃদয়গ্রাহী করে দাও। আর কুফরি-পাপাচার-অবাধ্যতার প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে দাও, আমাদেরকে সৎপথ অবলম্বনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করো।”
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ
৬. হে প্রভু, আমাদেরকে এবং ঈমানে অগ্রণী আমাদের ভাইদেরকে ক্ষমা করো এবং মু’মিনদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের পালনকর্তা, নিশ্চয়ই তুমি দয়ালু ও পরম করুণাময়।
رَبَّنَا أَتْمِمْ لَنَا نُورَنَا وَاغْفِرْ لَنَا إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
৭. “হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের নূরকে পূর্ণ করে দাও এবং আমাদেরকে ক্ষমা করো। নিশ্চয়ই তুমি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।”
وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا، إِنَّهَا سَاءتْ مُسْتَقَرًّا وَمُقَامًا
৮. “হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের কাছ থেকে জাহান্নামের আজাবকে সরিয়ে রাখো। উহার শাস্তি তো নিশ্চিত বিনাশ। নিশ্চয়ই উহা অস্থায়ী ও স্থায়ী আবাস হিসেবে কতইনা নিকৃষ্ট স্থান।”
رَبَّنَا إِنَّكَ مَن تُدْخِلِ النَّارَ فَقَدْ أَخْزَيْتَهُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ، رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّاسَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الأبْرَارِ
৯. “হে আমাদের পালন কর্তা, তুমি যাকে দোযখে নিক্ষেপ করলে তাকে তুমি নিশ্চয়ই অপমানিত করলে, আর যালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। হে আমাদের প্রভু! তুমি আমাদের পাপসমূহকে ক্ষমা করে দাও, আমাদের মন্দ কার্যগুলো দূর করে দাও আর আমাদের মৃত্যু দান কারো নেক লোকদের সাথে।”
وَمَا كَانَ قَوْلَهُمْ إِلاَّ أَن قَالُواْ ربَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِي أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
১০. “হে আমাদের প্রভু, ক্ষমা করে দাও আমাদের পাপকে এবং যা কিছু সীমালংঘন হয়েছে আমাদের কাজে। আমাদের পা সমূহ সুদৃঢ় রাখো এবং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদিগকে সাহায্য করো।”
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
১১. “হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করো, আখেরাতেও কল্যাণ দান করো, আর আমাদেরকে দোযখের আজাব থেকে রক্ষা করো।”
এছাড়াও কুরআনে বর্ণিত প্রায় সকল দুয়া দ্বারা প্রার্থনা করতে দেখা গেছে। আর হাদিসে বর্ণিত দুয়াসমূহের মধ্যে থেকে প্রায়ই তিনি নিুোক্ত দুয়াগুলো করতেন।
اللهم إني أسئلك فعل الخيرات وترك المنكرات وحب المساكين. اللهم إني أسئلك حبك وحب من يحبك وحب عمل يقربني إلى حبك.
১. “হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট চাই ভাল কাজ সম্পাদন করতে, মন্দ কাজ পরিহার করে চলতে ও গরীবদের ভালবাসতে। তোমার নিকট আমি আরো চাই তোমাকে ভালবাসতে, তোমাকে যে ভালবাসে তাকে ভালবাসতে। আর যে কাজ তোমার ভালবাসার দিকে আমাকে অগ্রসর করবে সে কাজকেও ভালবাসতে।”
اللهم باعد بيني وبين خطاياي كما باعدت بين المشرق والمغرب، اللهم نقني من الذنوب كما ينقي الثوب الأبيض من الدنس، اللهم اغسل خطايا بالماء الثلج والبرد.
২. “হে আল্লাহ, আমি ও আমার গুনাহসমূহের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে দাও। যেভাবে তুমি দূরত্ব করে দিয়েছ পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ, তুমি আমাকে গুনাহ হতে পরিস্কার করো। যেভাবে পরিস্কার করা হয় সাদা কাপড় ময়লা হতে। হে আল্লাহ, তুমি আমার গুনাহসমূহকে ধুয়ে ফেল পানি, বরফ ও মুষলধার বৃষ্টি দ্বারা।”
اللهم لا مانع لما أعطيت ولا معطي لما منعت ولا ينفع ذا الجد منك الجد
৩. হে আল্লাহ, তুমি যা দিবে তাতে বাঁধা দেবার কেউ নেই, তুমি যাতে বাঁধা দিবে তা দেবারও কেউ নেই এবং কোন সম্পদশালীকেই তার সম্পদ তোমার শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারবেনা। সম্পদও তোমা হতে প্রাপ্ত।
اللهم إني أعوذ برضاك من سخطك، وبمعافاتك من عقوبتك، وأعوذ بك منك لا أحصى ثناء عليك أنت كما أثنيت على نفسك.
৪. “হে, আমি তোমার সন্তোষের আশ্রয়ে তোমার অসন্তোষ হতে, তোমার ক্ষমার আশ্রয়ে তোমার শাস্তি হতে এবং তোমারই আশ্রয়ে তোমার ক্ষোভ হতে পানাহ চাচ্ছি। হে, তুমি যেরূপ তোমার প্রশংসা করেছ, তোমার সেরূপ প্রশংসা করার সাধ্য আমি রাখি না।”
اللهم أعني على ذكرك وشكرك وحسن عبادتك.
৫. “হে আল্লাহ, তুমি আমাকে তোমার স্মরণ করতে, তোমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে এবং তোমার ইবাদত উত্তমরূপে সম্পাদন করতে সাহায্য করো।”
পীর বুযুর্গদের বর্ণিত দুয়াসমূহের মধ্যে নিুের দুয়াগুলো বেশি বেশি করতেন।
اللهم اشرح بالصلاة عليه صدورنا، ويسر أمورنا، وفرج بها همومنا واكشف بها غمومنا واغفر بها ذنوبنا واقض بها ديوننا واصلح بها أحوالنا وبلغ بها آمالنا وتقبل لها توبتنا واغسل بها حوبتنا وانصر بها حجتنا وطهر بها ألسنتنا وآنس بها وحشتنا وارحم بها غربتنا واجعلها نورا بين أيدينا ومن خلفنا وعن أيماننا وعن شمائلنا ومن فوقنا ومن تحتنا وفي حياتنا وموتنا وفي قبورنا وحشرنا ونشرنا وظلا في القيامة على رؤسنا.
অর্থ: “হে আল্লাহ, তোমার হাবীব সা. এর উপর বর্ণিত দুরুদ শরীফের উসিলায় আমার বক্ষকে খুলে দাও, এর উসিলায় আমার কার্যসমূহকে সহজ করে দাও, আমার দুঃখ ও চিন্তাসমূহকে দূর করে দাও, পাপসমূহকে মাফ করে দাও, আমার কর্জসমূহকে আদায় করে দাও। আমার অবস্থাসমূহকে সংশোধন করে দাও, আমার কাক্সিক্ষত স্থানে (বেহেশতে) পৌঁছে দাও, আমার তাওবাকে কবুল করো, আমার পাপসমূহকে ধৌত করে দাও, আমার দলিল-প্রমাণকে বিজয়ী বানাও, আমার জবানকে পবিত্র করে দাও, আমার হিংস্রতাকে ভদ্রতা দ্বারা পরিবর্তন করো, আমার দরিদ্রতার উপর আমাকে রহম করো। আর এই দুরুদকে আমার সামনে-পেছনে, ডানে-বামে, উপরে-নিচে, জীবনে-মরণে, কবরে-হাশরে-নশরে আলোকবর্তীকা স্বরূপ করে দাও। আর কিয়ামতের দিন ইহাকে আমার মাথার উপর ছায়া স্বরূপ করে দাও।”
نشكو إليك يا رب قسوة قلوبنا وكثرة ذنوبنا وطول آمالنا وفساد أعمالنا وتكاسلنا عن الطاعات وهجومنا على المخالفات، فنعم المشتكى إليه، أنت بك نستغفر على أعدائنا وأنفسنا، فانصرنا. وعلى فضلك نتوكل في صلاحنا، فلا تكلنا إلى غيرك يا ربنا، وإلى جناب رسولك – صلى الله عليه وسلم- ننتسب، فلا تبعدنا، وببابك نقف فلا تطردنا، وإياك نسئل فلا تخيبنا. اللهم ارحم تضرعنا، وآمن خوفنا، وتقبل أعمالنا، واصلح أحوالنا، واجعل بطاعتك اشتغالنا، وإلى الخير مآلنا، وحقق بالزيادة آمالنا، واختم بالسعادة آجالنا، هذا ظلنا ظاهر بين يديك، وحالنا لا يخفى عليك، أمرتنا فتركنا، ونهيتنا فركبنا، ولا يسعنا إلا عفوك، فاعف عنا ياخير مأمول، وأكرم مسؤل، إنك عفو غفور، رؤف رحيم، يا أرحم الراحمين.
অর্থ: “হে প্রভু, আমি আপনার নিকট ফরিয়াদ করছি আমার কঠিন অন্তরের অধিক পাপের, দীর্ঘ আকাক্সক্ষার, মন্দ আমলের, আপনার আনুগত্যে অলসতার এবং শরিয়তবিরুধী কাজে ঝুঁকে পড়ার দরুন। সুতরাং আপনিই উত্তম ফরিয়াদ গ্রহণকারী। আমার শত্র“ ও নফসের উপর আপনার নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করি। অতএব আপনি আমাকে সাহায্য করুন। উপকারিতায় আপনার উপরই ভরসা করি। অতএব আপনি অন্যের দিকে সোপর্দ করবেন না। হে প্রভু, আর আপনার রাসূল জনাব মুহাম্মদ সা. এর সাথে আমার সম্পর্ক জুড়ে রাখো, আমাকে দূরে রেখো না। আপনার দরজায়ই পড়ে আছি, অতএব তাড়াবেন না। আপনার নিকটই প্রার্থনা করি। অতএব নিরাশ করবেন না। হে আল্লাহ, আমার কাকুতি মিনতির ওপর রহম করো, আমাকে ভয়-ভীতি থেকে নিরাপদ করো। আমার নেক আমলসমূহকে কবুল করো। আমার অবস্থাসমূহকে সংশোধন করে দাও, আমাকে আপনার আনুগত্যের মধ্যে সর্বদা ব্যস্ত করে রাখো এবং শেষ পরিণতি কল্যাণের উপর করিও। আমার অধিক আকাক্সক্ষা বাস্তবায়ন করো, সৌভাগ্যের কাজে আমার জীবনকে সমাপ্ত করো। আমার এ লাঞ্ছনা আপনার সামনে প্রকাশ্য। আপনার নিকট আমার অবস্থা গোপন নয়। আপনি যা আদেশ করেন, আমি তা ছেড়ে দেই, আর আপনি যা থেকে নিষেধ করেন আমি তা করে ফেলি, আমার (বাঁচার) সাধ্য নেই আপনার ক্ষমা ছাড়া। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।”
হে সর্বোত্তম সত্তা, যাদের নিকট আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করা যায় তাদের মধ্যে থেকে। হে দক্ষিণাকারী, যাদের নিকট চাওয়া হয় তাদের মধ্যে থেকে। নিশ্চয় তুমিই ক্ষমাশীল, মার্জনাকারী, অত্যন্ত করুণাময় ও দয়ালু। হে সর্বাধিক করুণাময়, করুণাকারীদের মধ্যে হতে।
মোনাজাতের শেষ দিকে হুজুর প্রায়ই বলতেন,وأفوض أمري إلى الله إن الله بصير بالعباد
অর্থ: “আমার সমস্ত কার্যকে সোপর্দ করলাম আল্লাহর দিকে। নিশ্চয়ই আল্লাহর তায়ালা তায়ালা তাঁর বান্দাদের প্রতি সুদৃষ্টি রাখেন।”
এরপর রাসূল সা. এর উপর দুরূদ শরিফ প্রেরণ করে আমিন! আমিন! বলে মোনাজাত শেষ করতেন। এতদ্ব্যতীত রামাযান মাসে ইফতারের পূর্ব মুহূর্তেও তাঁর রাহ. নাতিদীর্ঘ দুয়া করার অভ্যাস ছিল। বেশিরভাগই ইফতারের পূর্ব মূহূর্তে يا واسع الفضل اغفر لي অর্থাৎ “হে মহা অনুগ্রহকারী, আমাকে ক্ষমা করো” বলে আহাজারি করতেন।
উপরোক্ত দুয়াসমূহ যে কতই অর্থবহ, মর্মস্পর্শী ও আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্কের পরিচায়ক, তা আরবি ভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জনকারী প্রেমিকরাই অনুধাবন করতে পারবেন। অনুবাদ দ্বারা তা পুরোপুরিভাবে হৃদয়াঙ্গম করা সম্ভব নয়। এর দ্বারা সহজেই অনুমান করা যায় যে, প্রভুর সাথে তাঁর কত নিবিড় সম্পর্ক ও ভালবাসা ছিল।
হে আল্লাহ, তোমার এই প্রিয় বান্দার রুহানি ফয়েয দ্বারা আমাদেরকে ফয়যিয়াব করো এবং তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউসের সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন করো!
লেখক: ফাযিলে জামিয়া। নির্বাহী মুহতামিম, আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর মহিলা মাদরাসা