মনযুর আহমদ সালিম: জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুরের দীর্ঘ দিনের মুহতামিম হযরত আবদুল মতিন চৌধুরি শায়খে ফুলবাড়ি রাহ.’র বিশিষ্ট খলিফা হযরত শায়খ আবদুল হাই রাহ. এক ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্ব। প্রচারবিমুখ এ মহাপুরুষ আকাবিরে দেওবন্দের এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি। আকাবিরে দেওবন্দের ন্যায় ব্যাপক গুণাবলির অধিকারী ছিলেন তিনি। ইমামতি, ওয়াজ-নসিহত, দ্বীনি শিক্ষার প্রচার-প্রসার, তাসাউফ বা আধ্যাত্মিকতা, মসজিদ প্রতিষ্ঠা-পরিচালনা, দ্বীনি সংগঠন প্রতিষ্ঠা পরিচালনা, রাস্তাঘাট ও পুল নির্মাণসহ দ্বীনে ইসলামের প্রতিটি শাখা-প্রশাখা সমাজের প্রতিটি স্তরে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তাঁর অশেষ ত্যাগ-তিতিক্ষা ও কুরবানি রয়েছে। তিনি নিজের স্বার্থের উপর সামাজিক স্বার্থকে শুধু প্রধান্যই দেননি; বরং সামাজিক স্বার্থের সামনে নিজের স্বার্থকে জলাঞ্জলি ও দিয়েছেন বার বার।
সামাজিক অঙ্গনে তাঁর পদচারণার ইতিহাস অত্যন্ত সুদৃঢ়, দীর্ঘ ও বিস্তৃত। এ ছোট নিবন্ধে তা ফুটিয়ে তোলা কতটুকু সহজ হবে তা আমার জানা নেই। তথাপি সামাজিক যেসব কীর্তি তাঁর রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সরাসরি যোগযোগ করে ও সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের কাছ থেকে সরাসরি শুনে যে তত্ত্ব-উপাত্ত আমি জোগাড় করতে পেরেছি তা পাঠকের সামনে অতি সংক্ষেপে উপস্থাপনের চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।
সামাজিক অঙ্গনে তাঁর পদচারণাকে প্রথমত তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
১. তার সেসব সামাজিক অবদান যা প্রতিষ্ঠানিক বা সংগঠনিক নয়।
২. সেসব সামাজিক অবদান যা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ অর্জন করেছে।
৩. সমাজকল্যাণমূলক সাংগঠনিক অবদান।
অপ্রাতিষ্ঠানিক সামাজিক অবদান
জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুরের প্রতিষ্ঠা (১৩৮১হি./১৯৬১ঈ.) এর পাঁচ বছর আগ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হযরত শায়খ আবদুল হাই রাহ. আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর গ্রামের জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব ছিলেন। তিনি জামিয়া মাদানিয়ার মুহতামিম হন ১৩৯৯ হিজরিতে। মুহতামিম হওয়ার দুই যুগ পূর্বে ১৩৭৬ হি./১৯৫৬ঈসায়িতে একাধারে “দারুল উলুম দেউলগ্রামে” সহকারী শিক্ষক ও আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব নিযুক্ত হন। এজন্য এ যুগের ছাত্ররা যদিও তাঁকে “মুহতামিম সাহেব হুজুর” বলে জানে; কিন্তু এর দুই যুগ পূর্ব থেকে তিনি আঙ্গুরা মুহাম্মদপুরসহ তৎপার্শ্ববর্তী অঞ্চলে “ইমাম সাহেব হুজুর” নামে পরিচিত ছিলেন। জামিয়া মাদানিয়া প্রতিষ্ঠার পূর্ব থেকে সমাজের প্রত্যেক শ্রেণীর লোকদের সাথে তাঁর সু-সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আঙ্গুরা মুহাম্মদপুরের অনেকেই তাঁকে নিজের আপনজন থেকেও ভালবাসত। ফলে আঙ্গুরা মুহাম্মদপুরের সামাজিক এমন কোনো কর্মকাণ্ড নেই যেখানে হযরতের পক্ষে বিপক্ষের মতামতকে মূল্যায়ন করা হত না; বরং কেনো কোনো এমন বিষয়ও রয়েছে, যাতে গ্রামবাসী হযরতকেই মাধ্যম বানিয়ে সামাজিক সে কাজ সম্পন্ন করেছেন। তাঁর অপ্রাতিষ্ঠানিক সামাজিক গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর সংক্ষিপ্ত চিত্র নিুে পেশ করা হল:
১. অনেক সময় তিনি আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর অথবা নিজবাড়ি মাথিউরায় পারিবারিক কলহ-বিবাদ ও গোত্র-গোষ্ঠীর মধ্যকার বিবাদ মীমাংসা করতেন। ১৪১৬ হিজরিতে তিনি যখন লন্ডনে দ্বিতীয় সফর করেন, তখন মাথিউরার “বাহাদুরি বাড়ি’র মধ্যে একটি কবরস্থানকে নিয়ে পরস্পর বিরোধ তুঙ্গে ছিল। তিনি যুক্তরাজ্যে অবস্থান কালে বাহাদুরি বাড়ির লোকজনকে নিয়ে উক্ত বিরোধের মীমাংসা করেন।
২. তিনি আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর মসজিদে এ’তেকাফ করার সময় মু’তাকিফ হযরাত সবাইকে নিয়ে একসাথে বসে খাবার ব্যবস্থা করেন। প্রত্যেকের বাড়ি থেকে আলাদাভাবে খানা আসত। তিনি এক জাতের খানা সবগুলো এক সাথে মিলিয়ে নিতেন এবং সবার প্লেইটে অধিকাংশ সময় নিজেই বণ্টন করতেন এবং বলতেন “ আমি খানা বণ্ঠন করে সবার পরে বসব এবং খানা শেষ করে সবার আগেই উঠব”। যেমন বলা তেমন কাজ। তার এর ভূমিকা ফলে মানুষে মানুষে মিল-মহব্বত সৃষ্টি হয় এবং পরষ্পরে সামাজিক বন্ধন গড়ে ওঠে।
৩. আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর জামে মসজিদে তিনি অসামাজিক কু-সংস্কারের বিরুদ্ধে স্পষ্ট ভাষায় ওয়াজ করতেন। তাঁর ওয়াজ শুনে অনেক লোক এসব অসামাজিক কার্যকলাপ ছেড়েছে। কোথাও গান-বাজনা বা অসামাজিক কার্যকলাপের কোনো আয়োজনের সংবাদ শুনলে তিনিই প্রথমে এর উদ্যোক্তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করতেন। ফলে অনেকেই তাঁর নসিহত গ্রহণ করে গান-বাজনার আসরে যাওয়া বা অসামাজিক কার্যকলাপের আয়োজন থেকে বিরত রয়েছে। অনেক সময় বুঝানো কাজে না আসলে এলাকার সৎলোকদের নিয়ে এসব অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও গ্রহণ করতেন।
৪. আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর গ্রামের মধ্য দিয়ে কুশিয়ারা নদী প্রবাহিত হওয়ার দরুন নদীর ‘এপার গড়া সেপার ভাঙ্গা’ রীতিতে প্রায় বৎসরই ডাইকের কোনো না কোনো জায়গা ভেঙ্গে যেত। রাস্তা পুণঃনির্মাণে বা খালের উপর পুল স্থাপনের জন্য তিনি মসজিদের মিম্বরে বসে চাঁদা করতেন এবং এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে রাস্তা-ঘাট ও পুল নির্মাণের ব্যবস্থা করতেন। ১৯১৪ হিজরিতে যখন জামিয়া মাদানিয়ার পুরাতন ভবনের সামনের রাস্তাসহ বিরাট জায়গা একসাথে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়, তখন তিনি আঙ্গুরা মুহাম্মদপুরসহ মাদরাসার প্রতিটি গ্রামে গিয়ে “জারইল গাছ” চাঁদা করেন এবং মাদরাসার সামনে গাছ দিয়ে বেড়া দেয়ার ব্যবস্থা করেন। এদিকে মাদরাসাকে ভাঙ্গনের গ্রাস থেকে হেফাজত করার জন্য খতমে বুখারির ব্যবস্থা করেন। মাদরাসার আসাতিযা বিনা প্রতিদানে খতমে বুখারি পড়েন এবং হযরত দুয়া করেন। কায়মনোবাক্যে করজোড়ে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে তাঁর আহাজারি করেন। তাঁর আহাজারিতে তখন জামিয়ার আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে গিয়েছিল। মাহফিলে যারা উপস্থিত ছিলেন তারাই সে অবস্থা উপলব্দি করতে পারেন। ভাষায় সে মকবুল দুয়ার অবস্থা ব্যক্ত করা আজ সম্ভব নয়। ফলে রাস্তার যে অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ছিল সে অংশেই রাস্তা পুনরায় স্থাপন করা হয় এবং আজ পর্যন্ত সেখানে এত বড় ভাঙ্গনের সূত্রপাত হয়নি। নিশ্চয় তা হচ্ছে হযরতের কারামত। (সূত্র: ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও হযরত মাওলানা আবদুশ শহীদ মুহাম্মদপুরী, শিক্ষক, মেওয়া মাদরাসা)।
৫. আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর জামে মসজিদ
১৩৮২ বাংলায় যখন আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর জামে মসজিদ নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়, তখন গ্রামবাসী উক্ত মসজিদকে বর্তমান স্থানে (যেখানে মসজিদ আবারও নদীভাঙ্গনের হুমকির মুখে) স্থানান্তরিত করার জন্যে হযরতকে ভূমিকা গ্রহণের অনুরোধ জানায়। সামাজিক কাজে আগ্রহ থাকার কারণে হযরত তা সাদরে গ্রহণ করেন। মসজিদে লোকজনের কাছে চাঁদা করেন। বাড়ি বাড়ি হেঁটে লোকজনের কাছ থেকে অনুদান গ্রহণ করেন এবং তৎকালিন পাঁচ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেন এ বিশাল মসজিদ, তি-তলা বিশিষ্ট মিনারা, সাথে হুজরা ও অজুখানা ও মসজিদের আঙ্গিনা। সিলেটে তখন ব্রিকফিল্ডের প্রচলন ছিল না, তাই মসজিদের জন্য ব্রিকফিল্ডের ভালো ইট ঢাকা থেকে কার্গো যোগে নিয়ে আসেন। তখন সিমেন্টের বস্তা ছিল ১০ টাকা মাত্র। বর্তমানে এধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের শুধু বিল্ডিং-এ লাগবে কোটি টাকারও ঊর্ধ্বে। (সূত্র: মাওলানা আবদুশ শহীদ সাহেব মুহাম্মদপুরী)
৬. জিয়াপুর মসজিদ
জকিগঞ্জ উপজেলাধীন প্রসিদ্ধ কালিগঞ্জ বাজার থেকে কিছু দূরে জিয়াপুর নামক গ্রামে তাঁর মাধ্যমে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয়। মসজিদ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট হচ্ছে, আঙ্গুরা মুহাম্মদপুরের জনাব তসলিমুদ্দিন উরফে ‘কটই মিয়া’ জিয়াপুরে একটি নতুন বাড়ি নির্মাণ করেন এবং সেখানে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠার জন্যে আঙ্গুরা মুহাম্মদপুরের বিশষ্ট দাতা সমাজসেবী ও শিক্ষানুরাগী জনাব শফিক মিয়াকে বলেন। শফিক মিয়া এতে রাজি হন। তবে সাথে শর্ত জুড়ে দেন যে, “ভাই সাহেব” (শায়খ আবদুল হাই সাহেব) যদি মসজিদের কাজ হাতে নেন, তাহলে আমি মসজিদের ব্যবস্থা করব। হযরতের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি তাতে রাজি হয়ে যান এবং উক্ত মসজিদের ব্যয়ের হিসাবাদি ও তদারকি সম্পূর্ণ হযরতের হাতেই সমাপ্ত হয়। (সূত্র: হযরত মাওলানা আবদুল গাফ্ফার ছয়ঘরি)
প্রাতিষ্ঠানিক অবদান
১. জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর
১৩৮১ হি./১৯৬১ঈ. সালে দেউলগ্রাম (উত্তর), আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর, গোবিন্দশ্রী, আঙ্গুরা (পালকোনা), আকাখাজানা, ফুলমলিক, ঘাগোয়া, লাউঝারি ও শালেশ্বরে লোকজনকে সাথে নিয়ে উক্ত সনের ১৭ই সফর মুতাবেক ১৫ এপ্রিল ৬৫ জন ছাত্র ও নয় জন উস্তাদকে নিয়ে ইবতেদায়ি ১ম থেকে ফযিলত ২য় পর্যন্ত মোট ১৪টি ক্লাস এক সাথে খোলা হয়। হযরতের আঙ্গুরা মুহাম্মদপুরের সেই জামে মসজিদই জামিয়ার অস্থায়ী দরস্গাহ হিসাবে স্থান পায়। স্থায়ী জায়গার তীব্র প্রয়োজন উপলব্দি করে জামিয়া নবগঠিত কমিটি ও শিক্ষকবৃন্দ একাধারে ৭টি বৈঠক করার পর অবশেষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে মরহুম জনাব আবদুল কাদির সাহেব তাঁর বাড়ির উত্তর দিকের আড়াই কেদার জমি জামিয়ার জন্য ওয়াক্কফ করে দেন। ফলে এখানেই জামিয়ার পুরাতন ভবনের ভিত্তি স্থাপন করা হয়।
জামিয়ার ইহতিমামি পদে হযরত শায়খ আবদুল হাই রাহ.
জামিয়ার প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই হযরত জামিয়ার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী ছিলেন। এ জন্যই জামিয়ার প্রথম দরস তাঁর মসজিদেই শুরু হয়। বাহ্যিক দৃষ্টিতে দেখা যায়, হযরত জামিয়ার মুহতামিম হন ১৩৯৯ ইংরেজিতে, জামিয়া প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ১৯ বছর পর। অবশ্যই এর আগে ১৩৮৯ হিজরিতে হযরত শুধু এক বৎসরের জন্য জামিয়ার নাযিমে তালিমাত বা শিক্ষাসচিব ছিলেন। এ ছাড়া বাহ্যত দেখা যায় যে, দীর্ঘ ১৯ বছর শুধু শিক্ষকতা ছাড়া কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে হযরত ছিলেন না। কিন্তু বাস্তবিক সত্য হচ্ছে যে, উক্ত দীর্ঘ ১৯টি বছর জামিয়া পরিচালনার প্রকৃত প্রাণপুরুষ ছিলেন শায়খ আবদুল হাই রাহ.। কোনো পদ গ্রহণ না করা ছিল হযরতের এখলাস ও লিল্লাহিয়তের কারণে। বারবার তাকে নাযিম বানানোর প্রস্তাব আসে। ১৩৯২ হিজরিতে জামিয়ার বানিয়ে আ’যম প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম শায়খ শিহাবুদ্দীন রাহ.’র ইন্তেকালে পর তাকে মুহতামিম বানানোর প্রস্তাব আসে। কিন্তু তিনি তা কবুল করেননি; বরং তিনি মাওলানা শফিকুল হক আমকুনি সাহেবকে মুহতামিম বানান। ছয় বছর পর দুর্বোধ্য বিভিন্ন কারণে এবং মাওলানা শফিকুল হক আমকুনি সাহেব ইহতিমামি পদ থেকে ইস্তিফা দিয়ে মাদরাসা থেকে চলে যান। তখন হযরত শায়খ আবদুল হাইকে মুহতামিম বানানোর জন্য পুনরায় প্রস্তাব আসে। সমস্ত শিক্ষক স্টাফ তাঁকে মুহতামিম বানাতে একজোট। কিন্তু হযরত এতে বিলকুল রাজি হননি। পরবর্তীতে হযরত মাওলানা মুহি উদ্দিন পাঞ্জিপুরি ও জামিয়ার বর্তমান মুহতামিম ও নাযিম হযরত মাওলানা জিয়া উদ্দিন সাহেবদ্বয়ের অশেষ পিড়াপিড়িতে তিনি তা কবুল করতে রাজি হন। জামিয়ার শুরাসদস্যরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে হযরতকে ১৩৯৯ হিজরিতে মুহতামিম পদে নিয়োগ করেন।
মুহতামিম হওয়ার পূর্বে জামিয়ার প্রতিষ্ঠা ও অগ্রগতিতে হযরতের ভূমিকা
জামিয়ার বর্তমান মুহতামিম ও নাযিম হযরত মাওলানা জিয়া উদ্দিন সাহেব জামিয়ার প্রথম ১৯ বছর, (যখন হযরত শায়খ আবদুল হাই রাহ. মুহতামিম ছিলেন না, সে সময়কার হযরতের ভূমিকা সম্পর্কে বলেন, “হযরত শায়খ শিহবুদ্দীন রাহ.’র আমলে (১৩৮১-১৩৯২ হি.) গোবিন্দশ্রী ছাড়া প্রায় সকল গ্রাম থেকে চাঁদা কালেকশনসহ জামিয়ার বিভিন্ন ইহতিমামি বিষয়াবলি হযরতই সম্পন্ন করতেন, এবং মাওলানা আমকুনি সাহেবের আমলে (১৩৯৩-১৩৯৮হি.) একই গতিতে হযরত সহযোগিতা চালিয়ে গেছেন। জামিয়ার পুরাতন ভবনের জায়গাটুকু তাঁরই ভক্ত জনাব আবদুল কাদির সাহেব দান করেছেন।” উক্ত উদ্ধৃতি থেকে এ কথা ফুটে ওঠে যে, প্রথম ১৯টি বছরে জামিয়া পরিচালনার প্রাণপুরুষ ছিলেন শায়খ আবদুল হাই রাহ.। যদিও তাঁর এখলাসের দরুন জামিয়ার গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে তিনি নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
মুহতামিম হওয়ার পর জামিয়ার অগ্রগতিতে হযরতের ভূমিকা
হযরতের ইহতিমামি গ্রহণ করার পূর্বে জামিয়া ফযিলত ২য় তথা মিশকাত শরিফের ক্লাস পর্যন্তই থেমে যায়। হিফজ বিভাগ খুলে দু’ বৎসর পর তা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ১৩৯৯ হিজরিতে যখন হযরত মুহতামিম হন, তখন থেকেই জামিয়া এক বিরাট মহীরুহে আত্মপ্রকাশ করে। হযরতের আমলেই ১৪০৩ হিজরিতে হিফজ বিভাগ পুনরায় চালু হয়, যা অধ্যবধি সুচারুরূপে পরিচালিত হচ্ছে। উক্ত সনেই মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রমের উন্নতির লক্ষ্যে স্থায়ী বোর্ডিং খোলার সিদ্ধান্ত হয়। বর্তমানে এ বডিং প্রায় সাড়ে চারশত জন শিক্ষক-ছাত্রদের বিশাল একটি পরিবারে পরিণত হয়েছে। তাঁরই আমলে কুতুবখানা সম্প্রসারণের ব্যবস্থা করা হয়, যা বর্তমানে কয়েক হাজার কিতাবের ভাণ্ডারে পরিণত হয়েছে। ১৪০৫ হিজরিতে দাওরায়ে হাদিস খোলা হয়। ১৪০৯ হিজরিতে নিয়মতান্ত্রিকভাবে খোলা হয় ফতওয়া বিভাগ। হযরতের ইহতিমামির আমলে সূচনা হয় জামিয়ার ঐতিহ্যবাহী আব্না ও ফুযালা প্রতিষ্ঠান। “আশ্-শিহাব পরিষদ”। জামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম হযরত শায়খ শিহাবুদ্দীন রাহ.-র নামে নামকরণকৃত উক্ত প্রতিষ্ঠান ৪টি গুরুত্বপূর্ণ সেমিনারসহ বিভিন্ন গ্রন্থ ও স্মারক রচনা করে চিন্তার জগতে এক নতুন বিপ্লবের সূচনা করেছে। অভিজ্ঞ মহল বলতেই তা সবার জানা। তাঁরই আমলে জামিয়ার পুরাতন ভবনের সিংহভাগ বিল্ডিং স্থাপিত হয়। তিনি জামিয়ার প্রয়োজনে ১৯৮৭ ইংরেজিতে প্রথমবারের মতো লন্ডন সফর করেন এবং প্রায় ৩৩ লক্ষ টাকা জামিয়ার এলাকার শুভাকাক্সক্ষী ও ডোনারদের কাছ থেকে নিয়ে আসেন, যা বর্তমানে দুই কোটি টাকার সমান হবে। তাঁর লন্ডন সফরের সফলতা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে জামিয়ার বর্তমান মুহতামিম ও নাযিম হযরত মাওলানা জিয়া উদ্দিন সাহেব বলেন, “বাংলাদেশে এমন কোনো মুহতামিমের এমন দৃষ্টান্ত নেই, যিনি একই সফরে মাদরাসার এলাকার শুভাকাক্সক্ষীদের থেকে এত বিপুল পরিমাণ টাকা সংগ্রহ করতে পারেন।”
জামিয়ার নতুন ভবন স্থাপন
১৪১৪ হিজরিতে যখন জামিয়ার পুরাতন ভবনের সামনে বিরাট জায়গা হঠাৎ করে নদী ভাঙ্গনের সম্মুখীন হয়, তখন এহেন পরিস্থিতি জামিয়া কর্তৃপক্ষকে ভাবিয়ে তোলে। তাই মুহতামিম হিসাবে হযরত শায়খ আবদুল হাই রাহ. এক দিকে লন্ডন সফরের প্রস্তুতি নেন এবং অন্য দিকে জামিয়ার জন্য অন্য জায়গা তালাশ করতে থাকেন। প্রথমে জামিয়ার পুরাতন ভবনের পেছনের জায়গাটি সংগ্রহের চেষ্টা করেন। জায়গার মালিক আবদুস সামাদ মিয়ার সাথে জায়গার মূল্যের ব্যাপারে কথা-বার্তা প্রায় চুড়ান্ত হয়ে যায়। পরে বিশেষ কারণে সে জায়গা কিনা সম্ভব হয়নি। তারপর জামিয়ার পশ্চিমের বাঁশবাগান ফিল্ডে নতুন ভবন স্থাপনের চিন্তা করা হয়। কিন্তু এজায়গাটিও বিশেষ কারণে জামিয়া হাসিল করতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে আঙ্গুরা মুহাম্মদপুরের দক্ষিণ পার্শ্বে গ্রামের “গোচরা’য় (গরু চরার জন্য খালি জায়গায়) ভবনটি স্থাপনের প্রস্তাব উঠে। এ উদ্দেশ্যে জামিয়া মিলনায়াতনে আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর গ্রামবাসীর এক সাধারণ সভা আহবান করা হয়। সভায় পুরো গ্রামবাসী একমত না হওয়াতে উক্ত উদ্যোগও ব্যর্থ হয়। এভাবে দু’টি বছর কেটে যায়। নতুন জায়গা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এদিকে হযরতের লন্ডন সফরের প্রস্তুতি চূড়ান্ত হয়ে যায়। ফলে জায়গার ব্যাপারে কেনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই হযরত লন্ডন সফর করেন ১৪১৬ হিজরির রজবের শেষ দিকে। লন্ডনে গিয়ে হযরত সেখানে প্রবাসীদের সামনে সমস্যাটি তুলে ধরেন। জামিয়ার সব সময়ের ডোনার বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী হযরতের একান্ত ভক্ত জনাব শফিকুদ্দীন সাহেব সাড়ে চার কেদার জমি দান করলে সমস্যার সমাধান হয়। পরবর্তীতে উক্ত জায়গার পার্শ্বে আরোও জায়গা দান করেন গোবিন্দশ্রী নিবাসী জনাব আবদুল খালিক (কুটু মিয়া) ও আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর নিবাসী হাজি সোয়া উদ্দিন ও তাঁর ভাতিজা জনাব বদর উদ্দিন ও জনাব নোমান উদ্দিন প্রমুখ। হযরত মাদরাসার এলাকার লোকজনের কাছ থেকে দেড় লক্ষ টাকা করে একেক রুমের পয়সা সংগ্রহ করতে শুরু করেন এবং সফল সফর শেষে জামিয়ার পুরাতন ভবনের পরিকল্পনা নিয়ে ফিরে আসেন। লন্ডন থেকে ফিরে এসে হযরত আঙ্গুরা মুহাম্মদপুরের জামে মসজিদে জুমার আগের বয়ানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে, উক্ত সফরে জায়গার মূল্যসহ প্রায় এক কোটি টাকা চাঁদা হয়েছে, যা বর্তমানের ৩ কোটির সমান হবে। নিশ্চয় জামিয়ার জন্য এত বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ জনসাধারণের নিকট তাঁর গ্রহণযোগ্যতার পরিচয় বহন করে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ থেকে যারা ইংল্যান্ড সফর করেন। তাদেরকে সেখানের পরিচিত ব্যক্তিরা হাদিয়া দিয়ে থাকেন। কিন্তু হযরত লন্ডনে দু’বার সফর করার পরে তাঁর এত ভক্ত থাকার পরও তিনি ফিরত এসে একথা বলেননি যে, এত টাকা হাদিয়া পেয়েছি, বরং তিনি যেহেতু মাদরাসার খরচে গিয়েছেন, সে জন্য তিনি সব টাকাই জামিয়ার ফান্ডে জমা দিয়ে দেন। নিশ্চয় এধরনের দ্বীনের নিষ্ঠাবান কর্মী আজ খুবই বিরল। আল্লাহ যেন আমাদেরকে তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণে তাওফিক দান করেন। আমিন।
দারুস্সুন্নাহ মুরাদগঞ্জ মাদরাসা
হযরত শায়খ আবদুল হাই রাহ.’র দ্বিতীয় প্রাতিষ্ঠানিক কীর্তি হচ্ছে বিয়ানীবাজারের “দারুস্সুন্নাহ মুরাদগঞ্জ টাইটেল মাদরাসা”। এ মাদরাসা প্রতিষ্ঠার একমাত্র উদ্যোগী হচ্ছেন হযরত নিজেই, হযরতের আশা ছিল, বিয়ানীবাজার শহরে একটি মাদরাসা হবে। এ জন্য তিনি বিয়ানীবাজার ও তৎপাশ্ববর্তী এলাকার উলামায়ের কিরাম ও মুরব্বীদের নিকট অনেক হাটাহাটি করেন। সবাইকে সাথে নিয়ে অবশেষে ১৪০২ হিজরির ৫ই জুমাদাল উলা, মুতাবিক ১৬ই মার্চ ১৯৮২ ইংরেজিতে আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তালিম বাংলাদেশের তৎকালীন নাযিমে ইমতেহান হযরত শায়খ হুসাইন আহমদ বারকোটির সভাপতিত্বে এক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং উক্ত মহফিলেই একটি মাদরাসা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মাদরাসার মুহতামিম নিয়োগ করা হয় হযরত মাওলানা মুস্তফা আহমদ রাহ. কে। ১৭ জন উলামা ও মুরব্বীদের নিয়ে হযরত শায়খ আবদুল হাই রাহ.’কে সভাপতি করে মাদরাসার শুরা কমিটি গঠন করা হয়। হযরত উক্ত মাদরাসার আজীবন সভাপতি ছিলেন। মুরাদগঞ্জ মাদরাসার এলাকায় তিনি ‘ছদর ছাহেব’ (সভাপতি) বলতে হযরতকেই বুঝায়। তিনি বিশেষ পরিস্থিতিতে দু’ তিন বার মাদরাসার মুহতামিম ও নিয়োগ হন। পরে উক্ত পদে অন্য লোককে বসিয়ে নিজে সরে দাঁড়ান। তাঁর তত্ত্বাবধানে এ প্রতিষ্ঠান তাড়াতাড়ি উন্নতির দিকে অগ্রসর হয়। ১৪২৫ হিজরিতে টাইটেল ক্লাস খোলা হয়। তার উপরই আস্থা রেখে এলাকার জনসাধারণ মাদরাসার প্রতি ঝুঁকে পড়ে। ফলে অত্যন্ত ব্যয়বহুল এ প্রতিষ্ঠানটি নতুন হলেও মাদরাসার বাজেট পূরণে এ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো সঙ্কট দেখা দেয়নি। ২৮ জন শিক্ষক এবং প্রায় চার শতাধিক ছাত্র নিয়ে “দারুস্ সুন্নাহ মুরাদগঞ্জ টাইটেল মাদরাসা আজ হযরত শায়খ আবদুল হাই রাহ.’র স্মৃতি বহন করছে। (সূত্র: বার্ষিক আস্-সুন্নাহ ২০০৫ ঈ. পৃষ্ঠা: ২৭-৩১ ও দারুস্সুন্নাহর বর্তমান কর্তৃপক্ষ)।
মাথিউরা দারুল কুরআন মাদরাসা
হযরত শায়খ আবদুল হাই রাহ.’র মূল বাড়ি ছিল মাথিউরা বাহাদুরি বাড়ি। তিনি সেখান থেকে বিয়ানীবাজারস্থ সুপাতলায় চলে আসেন। কিন্তু তিনি তাঁর মূল মাতৃভূমির কথা ভুলে যাননি। বিধায় মাথিউরায় সু-শিক্ষার একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার জল্পনা-কল্পনা তিনি করতে থাকেন। কিন্তু অসুস্থতা ও ব্যবস্ততা হযরতকে সেদিকে পূর্ণ মনযোগী হতে দেয়নি। এদিকে মাওলানা শায়খ আবদুশ শহীদ মুহাম্মদপুরীর বার বার উৎসাহ প্রদানে মাথিউরার হাজি আবদুল বাসিত (সাধু ভাই) ও মাওলানা রশীদ আহমদ প্রমুখ মাথিউরায় একটি আদর্শ দ্বীনী প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য হযরতের সাথে যোগাযোগ করেন। তাদেরকে পেয়ে হযরত অত্যন্ত খুশি হন। অবশেষে ২৩শে নভেম্বর ১৯৯৬ইংরেজিতে হযরত শায়খে কৌড়িয়া রাহ.’র হাতে উক্ত প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি স্থাপন করা হয়। মুহতামিম নিয়োগ করা হয় হযরত শায়খ আবদুল হাই রাহ.’কে। তিনি আজীবন এ প্রতিষ্ঠানের মুহতামিম ছিলেন। প্রায় দেড়শতাধিক ছাত্র, ১৮ জন শিক্ষককে নিয়ে সানবি ৩য় বর্ষ পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানটি আজ তাঁরই স্মৃতি বহন করছে। (সূত্র: মাথিউরা দারুল কুরআন মাদরাসার নবম বার্ষিক রিপোর্ট ও বর্তমান কর্তৃপক্ষ)।
জামিয়া মাদানিয়া তাহফিজুল কুরআন ফেঞ্চুগঞ্জ
১৯৯৬ ঈসায়ির শেষ দিকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ফেঞ্চগঞ্জ থানা শাখার এক জনসভা সেখানকার থানা শহরের প্রাইমারী স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। সে সভায় বাহিরা অতিথিদের অনেকের মধ্যে ছিলেন শায়খ আহমদ শফি এর বিশিষ্ট খলিফা হযরত মাওলানা আবদুশ শহীদ মুহাম্মদপুরী। সভার পরে মাওলানা সাইফুল ইসলাম সাহেব (মাদরাসার বর্তমান নির্বাহী মুহতামিম) সহ সভার অন্যান্য উদ্যোক্তারা অতিথিদেরকে হোটেলে মেহমানদারি করে বিদায় দেন। আসার সময় হযরত মাওলানা আবদুশ শহীদ সাহেবের মনে আসে যে, এ থানা শহরে বা তার আশ-পাশে যদি একটি দ্বীনি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয় তাহলে উলামায়ে হক্কানির হাত আরো শক্তিশালী হবে এবং দ্বীনের কাজ সেখানে আরো সম্প্রসারিত হবে। এ স্বপ্ন তার মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল। ইতোমধ্যে ফেঞ্চুগঞ্জ মুগলপুর নিবাসী মরহুম তজম্মুল আলী সাহেবের ছেলে জনাব সাইফুল আলম রুহেলের সাথে তাঁর দেখা হলে জনাব সাইফুল আলম সাহেব নিজের পিতার নামে একটি প্রতিষ্ঠান করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। ফলে মাওলানা আবদশ শহীদ সাহেব তার সাথে পরামর্শ করে উক্ত মাদরাসা প্রতিষ্ঠার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করেন। পরিকল্পনা মুতাবিক একদিন আমাদের আলোচিত ব্যক্তিত্ব শায়খ আবদুল হাই রাহ. এবং তাঁরই বিশিষ্ট সহকর্মী ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা জিয়া উদ্দিন সাহেব ও মাওলানা আবদুশ শহীদ সাহেবসহ অন্যান্য কয়েকজন আলিম ও শিক্ষানুরাগীদের নিয়ে নয়াসড়ক মীরবক্সটুলায় জনাব সাইফুল আলম সাহেবের বাসায় একটি বৈঠক করা হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত মুতাবিক জনাব সাইফুল আলম সাহেবের ফেঞ্চুগঞ্জের বাড়িতে ১৯৯৭ ঈসায়ির জুন মাসে উক্ত মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার প্রায় চার বছর পর জনাব সাইফুল আলম সাহেব মরহুম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন সাহেবের ছেলেদের কাছ থেকে কিছু জায়গা কিনে ও কিছু জায়গা তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে উভয়ের যৌথ উদ্যোগে ২০০১ সালে মাদরাসাকে তার বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত করা হয়। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে মাওলানা শায়খ আবদুল হাই সাহেব রাহ. ছিলেন উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রধান মুহতামিম। তিনি তাঁর আস্তাভাজন উদ্যমী ব্যক্তি মাওলানা সাইফুল ইসলাম সাহেবকে নির্বাহী মুহতামিম বানিয়ে মাদরাসার কার্যক্রম চালিয়ে যান। পরবর্তীতে হযরতের বার্ধক্য ও ব্যস্ততা বেড়ে গেলে তাঁরই øেহভাজন ব্যক্তি মাওলানা আবদুশ শহীদকে প্রধান মুহতামিম বানিয়ে ২০০৩ইংরেজি সালের ২৮শে জুলাই উক্ত পদ থেকে ইস্তিফা দেন। উক্ত মাদরাসা বর্তমানে ১৪ জন শিক্ষক ও প্রায় দুইশতাধিক ছাত্রদের নিয়ে শায়খ আবদুল হাই রাহ.’র স্মৃতি বহন করছে।
মহিলা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা
সামাজিক অঙ্গনে হযরত শায়খ আবদুল হাই রাহ.’র পদচারণা উম্মতে মুহাম্মদির শুধু পুরুষদের নিয়েই ছিল না; বরং এ ফিতনার যুগে সহ-শিক্ষার কুফল থেকে মুসলিম পবিত্র রমণীদেরকে কিভাবে হেফাজত রাখা যায়? সে নিয়েও তাঁর চিন্তার কোনো শেষ ছিল না। এ অধম একাধিকবার তাঁর এ বাণীটি শুনেছে যে, “আমার জীবনের আকাক্সক্ষা হচ্ছে তিনটি ১. একটি আদর্শ টাইটেল মাদরাসা সমাজকে উপহার দেয়া। ২. এমন একটি ব্যতিক্রমী হিফজ বিভাগ খোলা যেখান থেকে ২/৩ বছরে ছাত্ররা কুরআন হিফজ করতে সক্ষম হবে। ৩. আদর্শ মহিলা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা। “তাঁর এধরনের মনের বাসনা আমার মতো আরো অনেকেই শুনেছেন। মহিলা মাদরাসা নিয়ে তাঁর এ চিন্তার ফসল আজ আটটি গ্রাম নিয়ে গঠিত জামিয়া মাদানিয়া এলাকার মেয়েরাও ভোগ করছে তিনটি মহিলা মাদরাসার মাধ্যমে। হযরত রাহ. তাঁর জীবদ্দশায়ই তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরামর্শে জামিয়া মাদানিয়ার পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা আকৃতির এ স্বনামধন্য এলাকার মধ্যে পর পর তিনটি মহিলা মাদরাসা স্থাপন করেন, যার কিঞ্চিত বিবরণ নিুে প্রদত্ত করা হল।
আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর মহিলা মাদরাসা
১৭/০৫/১৯৯৫ঈ. ১৬/১২/১৪১৫ হিজরিতে আঙ্গুরা মুহাম্মদপুরের মুরব্বি বিশেষ করে মাওলানা আবদুল আহাদ সাহেবের সক্রিয় সহায়তায় তারই বাড়িতে অস্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয় উক্ত মহিলা মাদরাসা। উক্ত তারিখে সবক উদ্বোধনে অনেকের মাঝে উপস্থিত ছিলেন হযরত মাওলানা শায়খ আবদুশ শহীদ মুহাম্মদপুরী। হযরতের নির্দেশেই তিনি সবক উদ্বোধন করেন। পরে দুয়া করেন স্বয়ং হযরত। স্থায়ী ব্যবস্থাপনার জন্য মাদরাসার বর্তমান জায়গার সিংহভাগই দান করেন হযরতেরই এক ভক্ত আঙ্গুরা মুহাম্মদপুরের হাজি আফতাব আলী। উক্ত স্থানে বিল্ডিং বনানো শেষ হলে প্রতিষ্ঠার ছয় বছরেরও অধিককাল পর ২০০১ ঈসায়িতে বর্তমান বিল্ডিং-এ মাদরাসা স্থানান্তর করা হয়। শুরু থেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে মাদরাসার প্রধান মুহতামিমের পদ হযরতকে দেওয়া হলেও এখলাস ও লিল্লাহিয়্যতের মূর্তপ্রতীক হযরত রাহ. অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে কাজ চালিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করতেন। বর্তমানে এ মহিলা মাদরাসাটি নয়জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অর্ধশত ছাত্রীসহ সামাজিক অঙ্গনে হযরতের পদচারণার সোনালি ইতিহাসই বহন করছে।
আকাখাজনা মহিলা মাদরাসা
১৯৯৬ সালে আকাখাজনা গ্রামবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত সহয়তায় জামিয়া মাদানিয়ার সূদীর্ঘ এলাকার পূর্ব প্রান্তে প্রতিষ্ঠা করা হয় আকাখাজনা মহিলা মাদরাসা। হযরত উক্ত প্রতিষ্ঠানের আজীবন সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে উক্ত প্রতিষ্ঠানের ১১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও প্রায় দেড়শত জন ছাত্রীসহ উক্ত মহিলা মাদরাসাটি সামাজিক অঙ্গনে হযরতের এখলাসপূর্ণ ইতিহাসেরই স্বাক্ষর বহন করছে।
জামিয়া তায়্যিবা গোবিন্দশ্রী
জামিয়া মাদানিয়ার দীর্ঘময়ী এলাকার পশ্চিম প্রান্তে ২০০১ ঈসায়ীতে দীর্ঘ জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে হযরত শায়খ আবদুল হাই রাহ.’র সুপরামর্শ নিয়ে গ্রামবাসীর সহায়তায় প্রতিষ্ঠা করা হয় জামিয়া তায়্যিবা গোবিন্দশ্রী বা গোবিন্দশ্রী মহিলা মাদরাসা। উক্ত মহিলা মাদরাসা প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে অদ্যাবধি পরিচালনা করছেন হযরতেরই হাতে গড়া শিষ্য জামিয়া মাদানিয়ার মুহাদ্দিস মাওলানা আসআদ উদ্দিন আল-মাহমুদ। মাদরাসাটি আজ নয় জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও প্রায় দেড়শতাধিক ছাত্রীকে নিয়ে হযরতের সামাজিক অবদানের স্মৃতি হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে।
এসব প্রতিষ্ঠান ছাড়াও হযরতের আরো অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ার স্বপ্নছিল। বিশেষত হযরত রাহ.’র তাঁর বাড়ি সুপাতলায় একটি মহিলা মাদরাসা স্থাপনের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা ছিল। আল্লাহ চাহে তো একদিন তাঁর কোনো উত্তরসূরির মাধ্যমে তাঁর এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। তাছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালকরা হযরতের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করে অনেক উপকৃত হয়েছেন। সেসব প্রতিষ্ঠান উপর্যুক্ত বিবরণের বাইরে হয়েছে। (সূত্র: মহিলা মাদরাসা সংক্রান্ত সমূহ তথ্যসূত্র হচ্ছে সংশ্লিষ্ট মাদরাসার বর্তমান কর্তৃপক্ষ ও নিজ অভিজ্ঞতা)।
তাঁর সমাজ কল্যাণ মূলক সাংগঠনিক তৎপরতা
সামাজিক অঙ্গনে হযরত শায়খ আবদুল হাই রাহ.’র পদচারণার তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে তাঁর এসব সাংগঠনিক পদক্ষেপ যার ঝর্ণাধারা থেকে আজও হাজারো লোক উপকৃত হয়ে সুস্থ সমাজ বিনির্মাণে অনন্য ভূমিকা রাখছে। তাঁর সমাজকল্যাণমূলক এসব সাংগঠনিক কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সংগঠন এখানে উল্লেখ করছি।
১. তানযীমুল মাদারিস সিলেট বিভাগ
আরবি ভাষা শিক্ষা তথা কুরআন-হাদিস অনুধাবনের ক্ষেত্রে “ইলমে সরফ” বা আরবি শব্দবিদ্যার গুরুত্ব অপরিসীম। ইলমে সরফে পারদর্শিতা ছাড়া আরবি ভাষা শিক্ষা করা ও কুরআন হাদিসের সঠিক মর্ম উপলব্দি করা সম্ভব নয়। তাই সরফ শিক্ষায় ছাত্রদেরকে প্রতিযোগী করা ও সরফ শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ১৩৯৮ হিজরিতে যে সব ক্ষণজন্মা ব্যক্তিদের সুক্ষ্ম চিন্তাধারা ও অক্লান্ত প্রচেষ্ঠায় “তানযিমুল মাদারিস” নামক বোর্ডটি গঠিত হয়, তার মূল চিন্তানায়ক ও সফল অগ্রসেনানী হচ্ছেন শায়খ আবদুল হাই রাহ.। প্রতিষ্ঠার পরের বছর ১৩৯৯ হিজরিতে ৭টি মাদরাসার মুতাওয়াসসিতা ২য় বর্ষের পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক যাত্রা শুরু হয় উক্ত বোর্ডের। হযরতের ত্যাগ, নিষ্ঠা ও তাঁর আস্থাভাজন হওয়াতে তাঁরই নেতৃত্বে বোর্ডটি আজ ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হয়ে প্রায় শত মাদরাসার এক অটুট সংগঠনে পরিণত হয়ে নামধারণ করেছে “তানযিমুল মাদারিস সিলেট বিভাগ”। বোর্ডটির আজীবন সভাপতি ও সেক্রেটারি ছিলেন যথাক্রমে হযরত শায়খ আবদুল হাই রাহ. ও হযরত শায়খ মুস্তফা আহমদ পাতনি রাহ.। তাঁদের ওফাতের পর বর্তমানে এ বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হচ্ছেন, জামিয়া তওক্কুলিয়া রেঙ্গার স্বনামধন্য মুহাদ্দিস মাওলানা ইযায সাহেব,। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন হযরতের সহকর্মী মানুষ গড়ার কারিগর উক্ত বোর্ডের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা জিয়া উদ্দিন সাহেব। বোর্ডের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এখন পর্যন্ত এর কেন্দ্রীয় অফিস রয়েছে হযরতের পদভরে ধন্য জামিয়া কাসিমুল উলুম কাকরদিয়া শেওলা নেরাউদি মেওয়ায়। ১৪২৫ হিজরি থেকে উক্ত বোর্ড তাহফিযুল কুরআনের ১৫ পারার বৃত্তিমূলক পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে। বোর্ডটির আওতাধীন আজ হাজরো ছাত্র পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। “তানযিমুল মাদারিস সিলেট বিভাগ” আজ তার তেত্রিশ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে সামাজিক অঙ্গনে হযরত শায়খ আবদুল হাই রাহ.’র গৌরবোজ্জ্বল পদচারণার স্মৃতি বহন করছে।
২. মহিলা দ্বীনি শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ
বিভিন্ন স্থানে পুরুষদের শিক্ষার পাশাপাশি মহিলা মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে যখন হযরতের স্বপ্ন ও মনোবাঞ্চনা পূর্ণ হতে লাগল, তখন হযরত রাহ. এর মনে এ কথা জাগল যে, বিভিন্ন জায়গায় স্থাপিত মহিলা মাদরাসাগুলোর জন্যে একটি সুচিন্তিত শিক্ষাবোর্ড ও শিক্ষা কারিকুলামের প্রয়োজন, যা হবে একমাত্র মহিলাদের জন্য উপযোগী ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তিনি এসম্পর্কেও আর কোনো ধরনের গাফলতি না করে তাঁর সামাজিক জীবনে সহকারী, সত্যের পথে আজীবন লড়াকু মর্দে মুজাহিদ, জাতির নক্ষত্রতুল্য মাইল ফলক জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুরের বর্তমান মহাপরিচালক হযরত মাওলানা জিয়া উদ্দিন সাহেবের পরামর্শ ও সহযোগিতায় একটি বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। হযরত নিজেই আহবায়ক হয়ে তৎকালে একই মানসিকতায় গড়ে ওঠা মহিলা মাদরাসাসমূহের দায়িত্বশীলদেরকে নিয়ে বোর্ড গঠনের আহবান করেন। আল-হামদুলিল্লাহ এই দুই মহা মনীষীর প্রচেষ্ঠায় ১৩/০১/২০০১ঈসায়ি মুতাবিক ২৭/১০/১৪২১ হিজরিতে সাতটি মাদরাসার দায়িত্বশীলদেরকে নিয়ে “মহিলা দ্বীনি শিক্ষা বোর্ড বাংলাদেশ” এর জন্ম ও যাত্রা শুরু হয়। হযরত রাহ. সাত সদস্যবিশিষ্ট নতুন এ বোর্ডটির সভাপতি নিযুক্ত করেন জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুরের খ্যাতনামা শায়খুল হাদিস দুধাই পাতন মহিলা মাদরাসার মাননীয় প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম মাওলানা মুফতি মুজীবুর রহমানকে। তিনি এ পর্যন্ত উক্ত বোর্ডের সভাপতি রয়েছেন। সেক্রেটারি নিযুক্ত হন হযরত মাওলানা মাহমুদুর রহমান সাহেব আকাখাজানা। প্রতিষ্ঠার সাথে সাথেই বোর্ডের গঠনতন্ত্র লিখার জন্য হযরত রাহ. নির্দেশ করেন তারই হাতে গড়া ব্যক্তিত্ব গোবিন্দশ্রী মহিলা মাদরাসার মুহতামিম হযরত মাওলানা আস্আদ উদ্দিন আল-মাহমুদকে।
হযরতের হাতে গড়া এই বোর্ডটি আজ সিলেট বিভাগের সর্বোচ্চ মহিলা বোর্ড হিসাবে পরিচিত ও খ্যাত। বোর্ডটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দশ্রী মহিলা মাদরাসার শিক্ষক হযরত মাওলানা শাহেদ আহমদ। (সূত্র: মাওলানা শাহেদ আহমদের কাছ থেকে প্রাপ্ত বোর্ডের রেকর্ডপত্র)।
৩. আঞ্জুমানে ইজহারে হক
হযরত শায়খ আবদুল হাই রাহ.’র সক্রিয় উদ্যোগে বিভিন্ন চিন্তা-ভাবনার পর ৩০/১১/১৯৮৭ ইংরেজিতে প্রতিষ্ঠা করা হয় “আঞ্জুমানে ইজহারে হক”। অতীতে এ সংগঠনটি গোটা বিয়ানীবাজারে আহলে হকের পতাকাবাহী সবচেয় মজবুত সংগঠন ছিল। সংগঠনের সংবিধানের বিবরণ অনুযায়ী উক্ত সংগঠনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হচ্ছেÑ
১. মানুষকে হেদায়তের দিকে আহবান করা।২. ইসলামি জ্ঞানের প্রচার।৩. আত্মশুদ্ধি।৪. জনসেবা।৫. অসামাজিক কার্যকলাপের প্রতিরোধ।
উক্ত উদ্দেশ্যাবলিকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পাঁচ দফা কর্মসূচি গৃহীত হয়:
১. দাওয়াত।২. তালিম।৩. ইসলাহ।৪. খেদমত।৫. জিহাদ।
সংগঠনের উক্ত উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি শুধু তার সংবিধানেই ছিল না; বরং সংগঠনটি তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সর্বপ্রকার অসামাজিক কু-সংস্কারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। এ সংগঠনের মাধ্যমে ২৭শে ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮ ও ১৪ই জানুয়ারি ১৯৯১ ইংরেজিসহ বিভিন্ন তারিখে বিয়ানীবাজারের আজীর মার্কেট, ফরিদ মার্কেট ও হাইস্কুল মাঠে বিরাট বিরাট সিরাতুন্নবী মাহফিল ও অন্যান্য দ্বীনি মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। হযরতের পৃষ্ঠপোষকতায় উক্ত সংগঠনটি অসামাজিক কার্যকলাপের প্রতিরোধ, বন্যাদূর্গতদের সাহায্য ও সায়্যিদ আসআদ মাদানি রাহ. সহ বিভিন্ন বুযুর্গের মাধ্যমে ইসলাহি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বর্তমানে “হিজবে ইলাহী” বিয়ানীবাজার “আঞ্জুমানে এজহারে হক” নামে কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলছে। হিজবে এলাহীর প্রতিষ্ঠায় হযরত রাহ. প্রধান উদ্যোগী না হলেও তাঁর সুপরামর্শ নিয়ে তার পৃষ্টপোষকতায় উক্ত সংগঠন পরিচালিত হয়।
বি. দ্র. সামাজিক অঙ্গনে হযরত শায়খ আবদুল হাই রাহ.’র বিচরণ ও পদচারণা অত্যন্ত গভীর ও ব্যাপক। তার গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহের সংক্ষিপ্ত চিত্র আমি উপর্যুক্ত সূত্রসমূহ থেকে সংগ্রহ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। এক্ষেত্রে কতটুকু সফল হয়েছি তাঁর বিচার পাঠকদের হাতে রইল। তবে আশা করি আমার এ প্রাথমিক গবেষণা হযরত রাহ.’র জীবনী গবেষকদের জন্য মাইল ফলক ও তাদের গবেষণার প্রাথমিক ভিত্তি হিসাবে কাজ করবে। আমি এ নিবন্ধের প্রতিটি তত্ত্বকে হযরত রাহ.’র বিশিষ্ট সহকর্মী ও তাঁর সামাজিক জীবনের সবচেয়ে বড় সাক্ষী মানুষ গড়ার কারিগর বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও চিন্তাবিদ হযরত মাওলানা জিয়া উদ্দিন-এর সামনে পেশ করেছি। এ ক্ষেত্রে তাঁর দিক নির্দেশনা ও ঈষৎ পরিমার্জনকে গ্রহণ করার পরই তা পাঠকের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে।